Change privacy settings

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের দ্রুত নির্বাচনী রোড ম্যাপ দেওয়া উচিত হবে কী ?

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় যখন ৫ ই আগস্ট শেখ হাসিনা  ভারতে পালিয়ে যায়। ছাত্র জনতার এ সফল অভ্যুত্থানের পর ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কে অনুরোধ করে ক্ষমতায় বসানো হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা কেউই ক্ষমতা চায়নি, বরং তারা দেশ ও জাতির কল্যাণে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর সরকারের প্রতি কাদের কাদের সমর্থন রয়েছে সেটি আমাদের দেখতে হবে। এটা আসলে একটা বিপ্লবী সরকার ও  নিয়ম তান্ত্রিক সরকারের একটি মাঝামাঝি সরকার। 

যদিও আমাদের সংবিধান অক্ষুন্ন রয়েছে কারণ আমাদের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছেন। আবার আমরা সংবিধানের কিছু কিছু অনুচ্ছেদ সরাসরি অস্বীকার করেছি। সংবিধানের ৭.২নম্বর অনুচ্ছেদে রয়েছে সব সরকারি বেসরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখতে হবে। আমরা কিন্তু ইতিমধ্যেই সংবিধান লঙ্ঘন করেছি। এখন যদি সংবিধান মানা হয় তাহলে আমরা সবাই দেশদ্রোহী। এমনকি ডক্টর ইউনূস ও দেশদ্রোহী। কিন্তু আমাদের জনগণের যে আশা আকাঙ্ক্ষা তাতে সংবিধান সংস্কার অথবা পুনঃ লিখন করতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে নানা মতের মানুষ রয়েছে, এমনকি যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে জামাতে ইসলামী, বিএনপি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় পার্টি, খেলাফতে মজলিস, সিপিবি সহ যারা বিরোধী দলে ছিল বা সরকার সমর্থিত জোটেও ছিল তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের সংবিধান পুনঃ লিখন অথবা সংস্কার করতে হবে। এটি একটি সময় সাপেক্ষ কাজ। 

ইতিমধ্যে ড.আলী রিয়াজের নেতৃত্বে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে এবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন সংস্কার পুলিশ সংস্কার এসব নিয়ে মোট ছয়টি কমিশন গঠিত হয়েছে এসব কমিশনকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে । এ কমিশন করা হয়েছে মূলত দেশে বিদ্যমান কাঠামো, হাসিনার প্যাসিজমের যে কাঠামো এ কাঠামোর কিভাবে গঠনতান্ত্রিক সংস্কার করে সুস্থ একটা অবকাঠামো দাঁড় করানো। যদি আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হয় তাহলে এখন যে পুলিশের অফিসার রয়েছে তাদের অধিকাংশই ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছে। এরা হাসিনার আমলের সুবিধাবাদী অফিসার। এ প্রশাসন দিয়ে কখনোই সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়।

 এখানে শুধু পুলিশ ই নয় সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী , র‍্যাব ও বিজিবির অফিসাররাও রয়েছেন।আমাদের প্রশাসনিক সংস্কার হচ্ছে যোগ্য লোককে যোগ্য স্থানে বসানো এবং দলবাজ,তেলবাজদের তাদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী বিচার করা এবং চাকরিচ্যুত করা। গণতন্ত্রের লেবাস পড়ে দেশে অনেক সরকার এসেছে। কিন্তু কাল ক্রমে তা রূপ নিয়েছে স্বৈরতন্ত্রে।

অন্যদিকে নির্বাচন দিতে গেলে নির্বাচন কমিশনের আইন সংস্কার করা লাগবে। কারণ হাসিনা যে তিনটা ভুয়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে ছিল এর বৈধতা কিন্তু আইন তাকে দিয়েছিল,নির্বাচন কমিশন তাকে বৈধতা দিয়েছিল ,সংবিধান তাকে বৈধতা দিয়েছিল, এই সংস্কার না করে আপনি কিভাবে নির্বাচন দিবেন? এই সংস্কারগুলো করা আমাদের অন্তর্বর্তীকাল কালীন সরকারের প্রধান কাজগুলোর একটি । এইটার পাশাপাশি নির্বাচন ও দিতে হবে। কারণ এ সরকার একটা অনির্বাচিত ও বিপ্লবী সরকার।গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, নির্বাচনের বিকল্প নেই। যদিও শুরুর দিকে বলা হয়েছিল এ সরকারের মেয়াদ ৩-৬ বছর। আমরা সরকারকে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার হিসেবে দেখতে চাই না এমনকি সরকারে যারা আছে তারাও সেটি চান না। যারা ভোটের রাজনীতি করে জনগণের রাজনীতি করে তারা চাইবেই।জনগণের কাছে যাবে ভোটের দাবি করবে তাদের দাবির প্রতিও দেশের মানুষের পূর্ণ সমর্থন আছে। 

এই মুহূর্তে আপনি যদি ভাবেন তিন মাস পর নির্বাচন দিবেন তাহলে আওয়ামী লীগের কি হবে? যদিও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জেলে রয়েছে কিন্তু তাদের অনেক নেতা ভারত ইউরোপ ও আরব আমিরাতে পালিয়ে গিয়েছে। তাদের আপনি কি করবেন? নির্বাচনের আগে তাদের যদি সাজা না হয় পরে তো তারা নির্বাচন করে বৈধ হবে। তারপর তারা বৈধভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবে। অর্থাৎ আগামী ৬ মাস অথবা এক বছরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া মানে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপির জামাত কি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দিবে? অবশ্যই না উল্টো এ বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশে যে অরাজকতা বা মব জাস্টিস সৃষ্টি হবে তার দায় নিবে কে? এ বিষয়ে বিএনপি-জামাত ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে দায়িত্ব নিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে যেতে হবে।

 নির্বাচন কমিশনের সংস্কার হয়ে গেলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ  করতে হবে তারপর নির্বাচন পদ্ধতিটা কিভাবে হবে ,একসাথে সারাদেশে হবে নাকি ভারতের মতো ধাপে ধাপে হবে  এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমাদের আসলে কত দিন সময় দেওয়া উচিত। সচেতন নাগরিক হিসেবে এ কাজগুলো কত দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারবো। এক্ষেত্রে আমার ধারণা হচ্ছে ৩-৫বছর লেগে যেতে পারে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এ সময় সরকারের পাশে থেকে  সরকারকে সহযোগিতা করা এবং হাসিনা সরকারের আমলে যে সকল বৈদেশিক নীতি যেমন রেল ট্রানজেকশন যেটি আমরা সৈয়দপুর দিয়ে  ঢুকে মেঘালয় দিয়ে বের হবে, গৌতম আদানি চুক্তি সহ বিদ্যুৎ খাত এর অনায্য চুক্তিগুলোর বাতিল করে সঠিক পথে আগাতে হবে। এক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল সহ দেশবাসী সমর্থন লাগবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন,"এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবেনা এই সরকার আমাদের সরকার এ সরকার জাতীয় সরকার।" তাছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান একই কথা বলেছেন এবং এই সরকারের ব্যাপারে জামায়াত অত্যন্ত আন্তরিক। এছাড়াও আমরা কিছু কিছু বিতর্কিত মন্তব্য শুনেছি যেমন উপদেষ্টাদেরকে ছয় ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হচ্ছে। যদি এই সরকার কোন ভাবে ব্যর্থ হয় তাহলে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখীন হতে হবে। 

এই চাপটা নেওয়ার সক্ষমতা কিন্তু আমাদের কোন রাজনৈতিক দলের নেই কারণ রাজনৈতিক দলগুলো বিগত 15 বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর গুলোর বৈদেশিক ব্যাপারে সাংগঠনিক কাঠামো খুবই দুর্বল। আমাদের পশ্চিমা শক্তির সহযোগিতা লাগবেই। যেহেতু আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আশা করি।তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে এ সহযোগিতা কে আরো বেশি বাড়িয়ে নিবেন। তিনি একটি রোডম্যাপ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করবেন এবং আমরা সেই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হব এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে সরকারের পাশে থাকব। বিএনপি, জামাত সহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের উচিত এ সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য নূন্যতম ৩ বছর সময় দেওয়া এবং সংযমের সাথে সকল পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে থাকা।

রিপোটার্স : মেহেদী হাসান ভূঁইয়া(শান্ত) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url